Author Topic: বিনিয়োগকারীরা আইডিয়া বা প্রোডাক্ট দেখেনা, তারা দেখে আপনাকে  (Read 4043 times)

Rashadul Islam

  • Administrator
  • Newbie
  • *****
  • Posts: 45
  • Karma: +0/-0
    • View Profile
বিনিয়োগকারীরা আইডিয়া বা প্রোডাক্ট দেখেনা, তারা দেখে আপনাকে

শারীরিক, সামাজিক, এবং আর্থিক প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে নুসরাত জাহান তার ইন্টারেক্টিভ আর্টিফ্যাক্ট এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সামনের দিকে। পোস্ট গ্রাজুয়েশন শেষ করে কিছু দিন চাকরি করলেও তাতে মন বসাতে পারেন নি। কারণ দেশের জন্য, সমাজের জন্য এবং বিশেষ করে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু করার চিন্তা তাকে মানসিক পীড়া দিচ্ছিলো। অবশেষে সাহস নিয়ে নানা রকম বাঁধার পাহাড় ডিঙিয়ে নেমে গেলেন ব্যবসায়ে। সেই গল্পই শুনাবেন তিনি আজ বিনির্মাণের কাছে।

বিনির্মাণ

আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড এবং কাজের সম্পর্কে বলুন।

নুসরাত জাহান

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ শেষ করি এবং মাস্টার্স করেছি জার্মানি থেকে ইউজেবিলিটি ইঞ্জনিয়ারিংয়ের উপর। এটি আইটিরই একটি অংশ। ২০১৬ সালে আমার কোম্পানী ইন্টারেক্টিভ আর্টিফ্যাক্ট কাজ শুরু করে। এরকম একটা কোম্পানী গড়ে তোলার ইচ্ছা ছিলো অনেক আগ থেকেই। কিন্তু বিভিন্ন কারণে সম্ভব হয়ে উঠেনি। পরবর্তীতে সুযোগ আসে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের একটা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে। সরকারি সেই প্রতিযোগিতায় আমার ব্যবসায়ের ধারণাটি পছন্দ হওয়ায় আমাকে ফান্ডিং করা হয়। তারপরই আমি সাহস পাই এই ধরণের একটি বিজনেস নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার।

বিনির্মাণ

কোম্পানীটি প্রতিষ্ঠা করার পিছনে কোন জিনিশটি বেশি ভূমিকা পালন করেছে?

নুসরাত জাহান

আমি ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড একজন মানুষ। জন্ম থেকেই আমার ডান হাত বিকল। আমার লক্ষ্য ছিলো এসব মানুষদের জন্য কিছু করবো। সুতরাং তাদের জন্য কাজ করার আকুলতা নিয়েই আমার পণ্যটি তৈরি করছি। আমার পণ্য হচ্ছে ফিজিওট্র্যাক। এটা শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষদের শারীরিক ব্যায়াম সঠিকভাবে পরিমাপ করতে সাহায্য করবে। সেই সাথে অটো রিপোর্ট তৈরি হবে। তারা চাইলে পরবর্তীতে সেই রিপোর্ট ডাক্তারদেরকে দেখাতে পারবে। ডাক্তার রিপোর্ট দেখে রোগীকে পরামর্শ প্রদান করবেন।  আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই এই ধরণের কিছু করার মোটিভেশন পেয়েছি। ছোটবেলা থেকে আমি আমার হাতের নিয়মিত ব্যায়াম করতাম না। অথচ আমার জন্য ব্যায়াম করাটা জরুরি ছিলো। সেখান থেকেই আমার ভাবনা ছিলো যদি এমন কিছু করা যায় যার কারনে মানুষ ব্যায়াম করার প্রতি আগ্রহী ও  উদ্বুদ্ধ হবে। তখন থেকেই পরিকল্পনা করি। কিন্তু শুরু করতে পারছিলাম না বিনিয়োগ করার মত পর্যাপ্ত মূলধন ছিলো না বলে। অতঃপর সরকারী সহায়তায় মাঠে নামার সাহস পাই।

ছোটবেলা থেকে আমি আমার হাতের নিয়মিত ব্যায়াম করতাম না। অথচ আমার জন্য ব্যায়াম করাটা জরুরি ছিলো। সেখান থেকেই আমার ভাবনা ছিলো যদি এমন কিছু করা যায় যার কারনে মানুষ ব্যায়াম করার প্রতি আগ্রহী ও  উদ্বুদ্ধ হবে। তখন থেকেই পরিকল্পনা করি।

বিনির্মাণ

আপনার পণ্য কি শুধু ফিজিওট্র্যাক? নাকি আরো পণ্য মার্কেটে সরবরাহ করেন? এবং এ ধরণের পণ্যের টার্গেট মার্কেট কোনটি?

নুসরাত জাহান

ইন্টারেক্টিভ আর্টিফ্যাক্টের মূল পণ্য হচ্ছে ফিজিওট্র্যাক। এর প্রাথমিক টার্গেট মার্কেট হচ্ছে ফিজিওথেরাপি সেন্টার বা হাসপাতাল। এছাড়াও আমরা অগমেন্টেড রিয়ালিটি ও ভার্চুয়াল রিয়ালিটি নিয়ে কাজ করি। ভার্চুয়াল রিয়ালিটির ফার্নিচার নিয়ে, পেইন্টিং নিয়ে আমরা কাজ করি। আমরা চাই বাংলাদেশে ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ও অগমেন্টেড রিয়ালিটিতে নতুন কিছু উপহার দিতে। বাংলাদেশে প্রথম অগমেন্টেড রিয়ালিটির গেইম ‘কিলোফ্লাইট’ কিন্তু আমাদেরই  তৈরি করা।

বিনির্মাণ

ইন্টারেক্টিভ আর্টিফ্যাক্টের জন্য কারো কাছ থেকে বিনিয়োগ নিয়েছেন কি?

নুসরাত জাহান

হ্যা। আমরা নিয়েছি।

বিনির্মাণ

কীভাবে পেয়েছেন এই বিনিয়োগ?

নুসরাত জাহান

শুরুতে আইসিটি মন্ত্রণালয়ের ইনোভেশন ফান্ড আমাদের অনেক সাহায্য করেছে। আইডিয়া সাবমিশনের মাধ্যমে আমরা সেই ফান্ডটা প্রাপ্ত হই। এ বছর  মার্চ মাসে ইনভেস্টমেন্ট বা ফান্ড উত্তোলন করলাম বিডি ভেঞ্চার থেকে। যেটা বাংলাদেশী ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানীর মধ্যে অন্যতম বৃহৎ। ফান্ড উত্তোলন করা আমার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিলো। তারপরও আমি বলবো বিনিয়োগকারীরা আসলে আইডিয়া বা প্রোডাক্ট দেখেনা, তারা দেখে আপনাকে।

বিনির্মাণ

আপনি বললেন বিনিয়োগকারীরা “আইডিয়া বা প্রোডাক্ট দেখেনা তারা দেখে আপনাকে”। একথা বলার পিছনে যুক্তি কী?

নুসরাত জাহান

আমি যখন প্রথম শুরু করি  তখন আমার কোম্পানীটি একটা আইডিয়াই ছিলো। সে সময় বিডি ভেঞ্চারকে প্রস্তাব করি আমার বিজনেসে বিনিয়োগের জন্য। আমি তাদেরকে আমার আইডিয়াটা জানাই। তখন তারা আগ্রহী ছিলো না, এবং বিনিয়োগও করেনি কারণ, আমার কোন প্রোটোটাইপ রেডি ছিলো না তখন। আমি একটু হতাশ হই কিন্তু দমে না গিয়ে সিদ্ধান্ত নেই একটা প্রোটোটাইপ রেডি করার। এক বছর পর আমি তাদেরকে আবারো প্রস্তাবনা দেই। তবে এবার আমার প্রোটোটাইপ তৈরি করা ছিলো। এবং তারা আমার সাথে কাজ করতে আগ্রহী হয়। ব্যক্তিগত উদাহরণ দেয়ার কারণ হলো  যে, তারা আমার স্পৃহা দেখেছে। একবছর আগে যে মেয়েটা প্রত্যাখ্যাত হলো প্রোটোটাইপ না থাকায়, সেই মেয়েটি প্রোটোটাইপ নিয়ে একবছর পর আবারো আবেদন করলো। আমার কাছে মনে হয়েছে তারা আমার এই পদক্ষেপটাকেই মূল্যায়ন করেছে। আমি এমনটি বলছিনা যে আইডিয়া দেখেই না। আইডিয়া বাস্তবায়নযোগ্য কি-না, তার থেকে কোম্পানি টাকা উত্তোলন করতে পারবে কি না, মানুষের কাছে বিক্রি হবে কি না এসব বিষয় বিবেচনা করেই তারা কোন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তার থেকেও বেশি দেখে উদ্যোক্তাকে। উদ্যোক্তার স্পৃহা কেমন ,তার ধৈর্য ধরার মানসিকতা কেমন, মাঝপথে ছেড়ে দিবে কি না- এগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিজনেসে আসলে অনেক চ্যালেঞ্জে নিতে হতে হয়। এ সময়ে সে পিছিয়ে পড়বে কী না। একজন বিনিয়োগকারী কিন্তু এসব বিষয় অনেক বেশি দেখে। এই ধারণা থেকেই বলেছি যে আইডিয়ার চেয়ে উদ্যোক্তাকেই বেশি দেখে।

উদ্যোক্তার স্পৃহা কেমন ,তার ধৈর্য ধরার মানসিকতা কেমন, মাঝপথে ছেড়ে দিবে কি না- এগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিজনেসে আসলে অনেক চ্যালেঞ্জে নিতে হতে হয়। এ সময়ে সে পিছিয়ে পড়বে কী না। একজন বিনিয়োগকারী কিন্তু এসব বিষয় অনেক বেশি দেখে।

বিনির্মাণ

স্টার্টআপ কোম্পানী প্রতিষ্ঠার কত বছরের ভিতরের ইনভেস্টমেন্ট রেইজ করা উচিৎ বলে আপনি মনে করেন?

নুসরাত জাহান

কত বছর না, আমি মনে করি শুরু থেকেই চেষ্টা করা উচিৎ। এমনকি পড়াশুনা চলাকালীন বা আইডিয়াটা যখন মাথায় আসবে তখন থেকেই প্রচেষ্টা চালানো উচিৎ। আপনি যদি বিদেশের কথা চিন্তা করেন,তারা স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায়ই আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে পারে, মূলধন উত্তোলন করতে পারে। ছোটবেলা থেকে শুরু করার কারণে তার বড় হওয়ার সাথে সাথে আইডিয়াটারও পরিপক্বতা আসে। এটা আসলে সময়ের বিষয় না যে কত বছর বা কতদিন পর ফান্ড উত্তোলনের জন্য চেষ্টা করবো। আপনার যদি ব্যবসা করার চিন্তা ভাবনা থাকে এবং উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী থাকেন, আপনার ভালো একটি আইডিয়া মাথায় থাকে এবং সেটা নিয়ে কাজ করতে উৎসুক থাকেন তখন থেকেই ইনভেস্টমেন্ট পাওয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

বিনির্মাণ

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এঞ্জেল ইনভেস্টরদের অস্তিত্ব কত টুকু?

নুসরাত জাহান

এঞ্জেল ইনভেস্টর থাকার অনেক সুবিধা আছে কিন্তু দুঃখজনক ভাবে বাংলাদেশে এর অস্তিত্ব কম। এখানে বিশ্বস্ততার ইস্যু আছে। আমাদের দেশে এঞ্জেল ইনভেস্টররা স্টার্টআপদের খুব একটা বিশ্বাস করতে পারেন না। এটার অবশ্য অনেক কারণও রয়েছে। আমাদের দেশের মানুষ রিস্ক নিতে অনাগ্রহী। তাদের মাঝে অনিশ্চয়তা কাজ করে। রিস্ক নিতে ভয় পায়। এজন্য এঞ্জেল ইনভেস্টরদের আমরা ঠিক ভাবে খুঁজে পাই না। বা যারাই বিনিয়োগ করতে চান তারাও মূলধন হারানোর ভয়ে স্টার্টআপ কোম্পানী গুলোতে বিনিয়োগ করতে চান না।

বিনির্মাণ

ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানীর বাংলাদেশে উপস্থিতি কেমন?

নুসরাত জাহান

বাংলাদেশে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানী খুব বেশি নেই। হাতে গোণা কয়েকটি সংগঠন কাজ করে যেমন বিডি ভেঞ্চার, বাংলাদেশ ভেঞ্চার, ডি মানি, ফেনক্স ইত্যাদি।

বিনির্মাণ

স্টার্ট আপ কোম্পানীর প্রতি তাদের কতটা সহযোগিতামূলক মনোভাব রয়েছে?

নুসরাত জাহান

এঞ্জেল ইনভেস্টর আর ভেঞ্চার ক্যাপিটাল দু’পক্ষের ব্যাপারটা অনেকটা একই রকম। কারণ সবাই ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে চায়। বাংলাদেশে আসলে এতটা অরক্ষিত অবস্থা যে আপনি সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই মোতাবেক কাজ করতে পারবেন না। ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানী গুলো বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে বিশ্বস্ততা অনেক বড় ফ্যাক্টর। যদিও আগের চেয়ে উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তবুও এখন পর্যন্ত অনুকূল অবস্থায় আসেনি। সময়ের সাথে সাথে এ অবস্থার উন্নতি হবে বলে আমি আশাবাদী।

বিনির্মাণ

ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানীর কালচার গড়ে উঠার পিছনে কি কি বিষয় ভূমিকা পালন করতে পারে?

নুসরাত জাহান

ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানীর কালচার গড়ে তুলার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। যেমন- ক্যাম্পেইন, সচেতনতা মূলক কার্যক্রম,  এবং বেশি বেশি মোটিভেশনাল প্রোগ্রামের আয়োজন করা। সবগুলো ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানী যদি একসাথে একটা প্ল্যাটফর্ম দাড় করায়, যেখান থেকে তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে এক্টিভেশন প্রোগ্রাম করবে, শিক্ষার্থীদের মোটিভেট করবে,তাহলে বর্তমান পরিস্থিতির উন্নয়ন হয়ে নতুন একটা কালচার তৈরি হবে। শিক্ষার্থীরাও ব্যবসা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করবে, কিভাবে ফান্ডিং পাওয়া যাবে সেই বিষয়ে ধারণা তৈরি হবে একই সাথে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল গুলোও তাদের ব্যবসা বড় করতে পারবে।

বিনির্মাণ

আপনি তো কয়েক বছর বিদেশে ছিলেন। সেই হিসেবে বিদেশি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল গুলো সম্পর্কেও আপনার জানার সুযোগ হয়েছে। আবার দেশে আসার পর দেশি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল গুলোর সাথেও কাজ করেছেন। দুই দেশের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল গুলোর মাঝে পার্থক্য কি?

নুসরাত জাহান

বাইরের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল যেমন, সিলিকন ভ্যালির কথাও যদি চিন্তা করেন, ওরা একটা আইডিয়াতে ইনভেস্ট করেই বসে থাকেনা, তারা এক্সিলেরেট করে, আইডিয়াকে কিভাবে পরিপক্বতার দিকে নেওয়া যায় তার পিছনে সময় ব্যয় করে, শ্রম দেয়, নেটওয়ার্ক বিল্ডিংয়ে অনেক সাহায্য করে। আমাদের দেশে এসব অনুপস্থিত। সুতরাং বলা যায় দুইটার মাঝে অনেক বড় পার্থক্য। এই পার্থক্য দূরীকরণে, সবগুলো ভেঞ্চার ক্যাপিটালের একসাথে কাজ করা উচিৎ। এবং বাইরের কালচার থেকে শিক্ষণীয় বিষয়টাকে অনুসরণ করা উচিৎ। তারা যদি একটা আইডিয়াকে বড় একটা বিজনেসে রূপান্তরিত করতে পারে তবে আমাদের দেশে কেনো অসম্ভব? আমরা যেহেতু তৃতীয় বিশ্বের দেশ আমাদের প্রচুর সমস্যা রয়েছে। প্রত্যেকটা সমস্যার সমাধান বের করে বিজনেসে নামার দারুণ সুযোগ আমাদের হাতের নাগালে। সেই সমস্যাকে সম্ভাবনায় রূপান্তরিত করতে পারে সবার সহযোগিতামূলক মানসিকতাই।

আমরা যেহেতু তৃতীয় বিশ্বের দেশ আমাদের প্রচুর সমস্যা রয়েছে। প্রত্যেকটা সমস্যার সমাধান বের করে বিজনেসে নামার দারুণ সুযোগ আমাদের হাতের নাগালে। সেই সমস্যাকে সম্ভাবনায় রূপান্তরিত করতে পারে সবার সহযোগিতামূলক মানসিকতাই।

বিনির্মাণ

স্টার্টআপ গুলোর শুরু থেকেই অনেক বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। আপনার চ্যালেঞ্জ গুলো কি ছিলো? এবং সেগুলো কিভাবে অতিক্রম করলেন?

নুসরাত জাহান

প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিলো পরিবার থেকে। খুব ভালো একটা জব করতাম আমি। সেই জব ছেড়ে বিজনেসে নেমেছি। যার ফলে পরিবার কিছুটা অখুশী ছিলো। এখনো যে তারা পুরোপুরি মেনে নিয়েছে ব্যাপারটা এমন নয়। সেই চ্যালেঞ্জটা এখনো সামলে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ এসেছে সমাজ থেকে। কোনো একটা মেয়ে বিজনেস করবে সেটা সমাজের কাছে এখনো অপ্রত্যাশিত। আমার বিভিন্ন এ্যাওয়ার্ড পাওয়া, বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করা, বিদেশে পড়াশুনা করা ইত্যাদি এসব ব্যাপার আমার আশেপাশের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সাহায্য করছে। তারপরের চ্যালেঞ্জটা মোটামুটি সব স্টার্টআপই ফেইস করে। সেটা হলো ফান্ডিং এর চ্যালেঞ্জ। এমনকি  একবার আমার মনে হয়েছিলো যে বিজনেসটা বন্ধ করে দেই। কিন্তু আমি শেষ পর্যন্ত হার মানিনি। তারপর বিডি ভেঞ্চার এগিয়ে আসলো। এছাড়াও একটা আইডিয়া বাস্তবায়ন করার সময় অনেক সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়। যেমন- কোন বিজনেস মডেলটা কাজে দিবে, কোনটা দিবেনা, প্রোডাক্ট মার্কেটে কতটুকু গ্রহণযোগ্য হবে। ব্যবসা করার সময় বলতে গেলে প্রতিটা সময়, প্রতিটা মুহূর্তেই চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হয়।

বিনির্মাণ

দুই বছর স্টার্ট আপে সময় দিয়ে কি কি বিষয় শিখতে পারলেন?

নুসরাত জাহান

প্রথমত, যা শিখলাম তা হলো নিজেকে পুরোপুরি সৎভাবে ব্যবসায়ের কাজে নিয়োজিত রাখতে হবে। পুরোপুরি মনোনিবেশ না করতে পারলে বিজনেস পরিচালনা করা সম্ভব না। দ্বিতীয়ত, ধৈর্য রাখতে হবে। কারণ যে চ্যালেঞ্জ গুলো আসে ধৈর্যের সাথেই সেগুলোর মোকাবেলা করতে হবে। ব্যবসায়ে শুরু করে আমার ধৈর্যের লেভেলটা অনেক বেড়েছে। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মার্কেট সম্পর্কে জ্ঞান বেড়েছে। দুই বছর আগে আমি যখন বিজনেসে নামি তখন আমার তেমন মার্কেট নলেজ ছিলোনা। এখন আমি কিন্তু বলতে পারি যে ফিজওথেরাপি সেন্টার গুলোতে আমার পণ্যের কতটুকু ডিমান্ড। আমি মনে করি যে কোন বিজনেসে নামার আগে মার্কেট রিসার্চটা জরুরী। এর মাধ্যমেই বুঝা যায় আপনার পণ্য মানুষের কাছে কতটুকু সমাদৃত হবে।

বিনির্মাণ

ভবিষ্যৎ নিয়ে কি ভাবছেন?

নুসরাত জাহান

আমার এই ফিজিওট্র্যাকটাকে অনেক বড় লেভেলে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা আছে। আন্তর্জাতিক মার্কেটে প্রবেশ করার স্বপ্ন দেখি। বাংলাদেশে মার্কেট লিডার হওয়ার আশা আছে এবং ইনশাআল্লাহ হয়ে যাবো।

বিনির্মাণ

উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার কি পরামর্শ থাকবে?

নুসরাত জাহান

অনেকেই মনে করে আমার একটা আইডিয়া আছে, সুতরাং এই আইডিয়া অন্যদেরকে শেয়ার করা উচিৎ না। অন্য কেউ চুরি করে নিবে। এই ট্যাবু থেকে বের হয়ে আসতে হবে। কোন আইডিয়া থাকলে সেটা সিনিয়রদের সাথে শেয়ার করতে হবে, বা বন্ধুরা মিলে আলোচনা করতে হবে। এবং পরবর্তী লেভেলে কিভাবে নেয়া যায় সেটার ব্যাপারে পরিকল্পনা করতে হবে। আরেকটা ব্যাপার আমি লক্ষ্য করেছি, এখনকার তরুণরা খুব মোটিভেশন নিয়ে কোন একটা কাজ শুরু করে। কিন্তু তারা সে মোটিভেশন ধরে রাখতে পারেনা। আমার মনে হয়, তাদের মাঝে স্থিরতার খুব অভাব যা থাকাটা খুব জরূরী। যে কোন কাজ মাঝপথে ছেড়ে দেয়া যাবেনা। এবং সততার সাথে আত্মনিয়োগ করতে হবে।

কোন আইডিয়া থাকলে সেটা সিনিয়রদের সাথে শেয়ার করতে হবে, বা বন্ধুরা মিলে আলোচনা করতে হবে। এবং পরবর্তী লেভেলে কিভাবে নেয়া যায় সেটার ব্যাপারে পরিকল্পনা করতে হবে। আরেকটা ব্যাপার আমি লক্ষ্য করেছি, এখনকার তরুণরা খুব মোটিভেশন নিয়ে কোন একটা কাজ শুরু করে। কিন্তু তারা সে মোটিভেশন ধরে রাখতে পারেনা।

বিনির্মাণ

বিনির্মাণের পক্ষ হতে আপনাকে ধন্যবাদ।

নুসরাত জাহান

আপনাকেও ধন্যবাদ।
Regards,
Md. Rashadul Islam
Operation Manager
Bangladesh Venture Capital Ltd.