Author Topic: লাইসেন্স ছাড়া আর্থিক ব্যবসা নিষিদ্ধ  (Read 1746 times)

monowarkamal

  • Full Member
  • ***
  • Posts: 130
  • Karma: +0/-0
    • View Profile
লাইসেন্স ছাড়া আর্থিক ব্যবসা নিষিদ্ধ

আইন অমান্য করলে ৩ বছর জেল * জাতীয় পরিশোধ কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব
মিজান চৌধুরী:

বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স ছাড়া আর্থিক লেনদেনের ব্যবসা (পরিশোধ ও সেবা) করা যাবে না। এর ব্যত্যয় হলে অনধিক তিন বছরের জেল ও আর্থিক জরিমানা হবে। এমন বিধান রেখে ‘পেমেন্ট ও সেটেলমেন্ট সিস্টেম আইন-২০১৯’-এর খসড়া চূড়ান্ত করেছে কেন্দ্রীয় এই ব্যাংকটি। খসড়ায় ডিজিটাল লেনদেনের ঝুঁকি কমাতে একটি ‘জাতীয় পরিশোধ কাউন্সিল’ গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে; যার প্রধান হবে গভর্নর। নতুন আইনে আর্থিক লেনদেনের তথ্য দেয়ার ব্যাপারে কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়েছে। মতামত নিতে খসড়াটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মতামত পাওয়ার পর আইনটি নির্ধারিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনুমোদন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ও বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক এমকে মুজেরি বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ‘এখন ডিজিটাল ফাইন্যান্সিংয়ের যুগ। পুরনো আইনের অনেক ধারা বর্তমানে কার্যকর হচ্ছে না। পেমেন্ট পদ্ধতিতেও ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে। ফলে প্রযুক্তির অপব্যবহারের পরিধিও বাড়ছে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই পেমেন্ট ও সেটেলমেন্ট আইনটি করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘প্রযুক্তির অপব্যবহার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি করেছে হ্যাকাররা। ফলে এসব মোকাবেলায় নতুন আইনের প্রয়োজন রয়েছে। যেখানে বাস্তবতার আলোকে আইনের ধারায় পরিবর্তন আনা হবে।’

প্রতিটি ক্ষেত্রে এখন ডিজিটাল রূপান্তরের পথে যাত্রা শুরু হয়েছে। বাণিজ্যিক বড় লেনদেন, ব্যাংক ট্রান্সফার মাধ্যমে ই-মানি, অনলাইন, ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার বেশ আগে থেকে হচ্ছে। পাশাপাশি অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রবাসী আয় ও বিনিয়োগের সঙ্গে বাড়ছে মুদ্রার চাহিদা ও পরিশোধ ব্যবস্থায় জটিলতা। এসব কথা চিন্তা করেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ আইনটি করতে যাচ্ছে। পেমেন্ট ও সেটেলমেন্ট আইনে উল্লিখিত কয়েকটি বিধান তুলে ধরা হল।

আইনের আওতায় থাকবে যেসব সেবা : নগদ অর্থ জমা ও উত্তোলন, লেনদেন সম্পাদন, পরিশোধ দলিল ইস্যু, রেমিটেন্স সেবা, অর্থ স্থানান্তর, ইলেক্ট্রিক মুদ্রা বা অনুরূপ মুদ্রা বিষয়ক দলিল ইস্যু উল্লিখিত আইনের অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে অনলাইন বা টেলিযোগাযোগ সেবা অথবা নেটওয়ার্ক ব্যবহারের অন্তর্ভুক্ত হবে না।

কার্যকর এরিয়া : নতুন আইনটি কার্যকর হলে এর আওতায় থাকবে এমটিএম বুথ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, আইন স্বীকৃতি মুদ্রা, ইলেক্ট্রনিক চেক ও মুদ্রা, ইলেক্ট্রনিক ট্রান্সফার, এজেন্ট, গ্রহণকারী, ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ড, চেক, চেকের ইলেক্ট্রক্যাল উপস্থাপনা, জাতীয় পরিশোধ ব্যবস্থা, ট্রানজেকশন, ক্যাশ সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট, মোবাইল ব্যাংকিং, ‘নগদ অর্থ’ নিকাশ, নিকাশ ঘর, নিকাশ পদ্ধতি, নেট সম্পত্তি, নেট সমাপ্তি মূল্য, পরিশোধ ব্যবস্থা পরিচালনাকারী ও সেবাপ্রদানকারী, পেমেন্ট কার্ড ও পরিশোধ দলিল।

মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন বহাল : এ আইনে বলা হয়েছে, অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে সকল সেবাপ্রদানকারী ও গ্রহণকারীকে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২, সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯, বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফইইউ) বিধান মেনে চলত হবে। পাশাপাশি আর্থিক সেবা ও পরিচালকারীর নিযুক্ত এজেন্টদের উল্লিখিত আইন ও বিধান মানতে হবে।

দণ্ড ও অপরাধ : অর্থের পেমেন্ট ও সেটেলমেন্ট ব্যবসার লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করলে সর্বনিু ১০ হাজার টাকা এবং সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা বা অনধিক ৩ বছরের জেলের বিধান রাখা হয়েছে। একই দণ্ড হবে যদি বাতিল হওয়া লাইসেন্স দিয়ে এ ব্যবসা করা হয়। এছাড়া অর্থ সেটেলমেন্ট ও পেমেন্ট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বা নির্বাহী কোনো নিরীক্ষকের কাজে বাধা দিলে তাকে বাংলাদেশ ব্যাংক ৩ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবে। একই পরিমাণ জরিমানা করতে পারবে কোন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান- তাদের আর্থিক হিসাব, বহি বা নথিপত্র বিনিষ্ট করলে। আইনে আরও বলা হয়, কোনো ব্যক্তি এ আইনের বিধান বা আইনটি বাস্তবায়নকালে জারিকৃত বিধান বা নির্দেশ লঙ্ঘন বা বাধাগ্রস্ত করলে বা এক্ষেত্রে সহায়তা করলে তাকে ১০ লাখ টাকা আর্থিক জরিমানা বা অনধিক ৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হবে। আইনে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক এ আইনের পরিশোধ ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে পারবে না।

জাতীয় পরিশোধ কাউন্সিল গঠন : আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে বজায় রেখে দেশের পরিশোধ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি এর ঝুঁকি কমাতে একটি জাতীয় পরিশোধ কাউন্সিল গঠন করা হবে। এর প্রধান হবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বা তার প্রতিনিধিত্বকারী পেমেন্ট সিস্টেম সংশ্লিষ্ট ডেপুটি গভর্নর। পরিশোধ ব্যবস্থার নিরাপত্তা বিধান, নতুনত্ব আনয়ন, পরিশোধ ব্যবস্থা পরিচালনাকারী ও সেবাকারীর মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করবে জাতীয় পরিশোধ কাউন্সিল। এছাড়া অর্থনৈতিক ও জাতীয় উদ্যোগের সঙ্গে সমন্বয় রেখে পরিশোধ ব্যবস্থায় কৌশলগত পরিবর্তন ও পরিচালনার সুপারিশ করবে। এ কাউন্সিল গঠনে নীতিমালা তৈরি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ফি ও চার্জ আরোপ : নগদ অর্থ পরিশোধ বা সেবা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান সেবা দেয়ার জন্য মাসুল বা ফি আরোপ করতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনে এসব মাসুল ও ফির সীমানা নির্ধারণের জন্য নির্দেশ দেবে। আরোপিত মাসুল বা ফি গ্রাহকদের অবহিত করতে দৃশ্যমান স্থানে টাঙ্গিয়ে রাখতে হবে। এদিকে এসব প্রতিষ্ঠানকে তদারকি করতে ব্যয়ের অর্থ আদায়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক মাসুল আরোপ করতে পারবে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামো সেবার জন্যও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফি আরোপ করতে পারবে।

লাইসেন্স নীতিমালা : ব্যাংক কোম্পানি ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি এ আইনে বাংলাদেশ ব্যাংকের যথাযথ লাইসেন্স ছাড়া নগদ অর্থ পরিশোধ সেবা দেয়া বা পরিশোধ ব্যবস্থার ব্যবসা করতে পারবে না। তবে কোনো ব্যাংক কোম্পানি ইলেক্ট্রিক মুদ্রায় পরিশোধ সেবা দেয়ার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক জনস্বার্থে লাইসেন্স বাতিল বা স্থগিত রাখার ক্ষমতা রাখবে। লাইসেন্স পাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন করা যাবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া এ লাইসেন্স আংশিক বা এর স্বত্ব হস্তান্তর করতে পারবে না। এ বিধান লঙ্ঘন হলে যে কোনো স্থানান্তর বাতিল হবে।

পরিদর্শন ও বিশেষ নিরীক্ষা : অর্থ সেবা ও পরিশোধ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক আইন অনুসারে কোম্পানির অডিট হওয়ার যোগ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নিরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে পারে। এ নিরীক্ষা কার্যক্রম চালানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সহায়তা করবে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করলে এ আইনের অধীনে পরিচালনাকারী, সেবাপ্রদানকারী দলিল ইস্যু অফিস সরঞ্জাম যন্ত্রপাতি হিসাব, বহি লেনদেন দেশ ও বিদেশের যে কোনো কার্যক্রম নিরীক্ষা করতে পারবে।

লেনদেনের তথ্য না দেয়া : লেনদেন পরিশোধ ও সেবার তথ্য যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দেয়া যাবে না। তবে আদালতের আদেশ থাকলে লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য দিতে হবে। পাশাপাশি কোনো ব্যক্তি আইনগতভাবে তথ্য পাওয়ার অধিকার রাখলে এবং আন্তর্জাতিক চুক্তির অধীনে বাংলাদেশের দায়-দায়িত্ব পালনের প্রয়োজনে তথ্য দিতে হবে। এছাড়া এ আইনের অধীনে কোনো কার‌্যাবলি সম্পাদন করার জন্য বা পরিশোধ ব্যবস্থায় আর্থিক ভুলভ্রান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তথ্য দেয়া যাবে।

এজেন্ট নিয়োগ ও ব্যবহার : গ্রাহকদের নগদ পরিশোধ ও সেবা দিতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান এজেন্ট নিয়োগ দিতে পারবে। তবে এজেন্টদের নাম ও ঠিকানাসহ সব তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নিকট পাঠাতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি পেলে প্রস্তাবিত এজেন্ট নিয়োগ বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ প্রদান করবে।

নথিপত্র সংরক্ষণ : এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের নথিপত্র ১২ বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হবে। তবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন-২০০৬ অনুযায়ী ইলেক্ট্রনিক যন্ত্র বা কৌশলে সংরক্ষণ করবে। কোনো পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান তাদের আর্থিক হিসাব, বহি বা নথিপত্র বিনিষ্ট করলে বাংলাদেশ ব্যাংক ৩ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারবে।

আউট সোর্সিং : নগদ অর্থ লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ করতে পারবেন বর্তমান আউট সোর্সিং সেবা আইনের আলোকে। এক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান নগদ সেবা ও পরিচালনায় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে আউট সোর্সিং করতে চাইলে আগেই বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে। আউট সোর্সিংয়ের ফলে কোনো প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ভিন্ন কারও নিকট অর্পণ করা যাবে না।

ঝুঁকিহ্রাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা : পরিশোধ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও ঝুঁকি কমাতে বাংলাদেশ ব্যাংক এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ করবে। প্রয়োজনে আধুনিক পরিশোধ ব্যবস্থার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করবে।

http://hawkerbd.com/news_details.php?news_id=569455&rip=rip