Author Topic: লাভ সবচেয়ে বেশি ফুল চাষে  (Read 1690 times)

Rashadul Islam

  • Administrator
  • Newbie
  • *****
  • Posts: 45
  • Karma: +0/-0
    • View Profile
বাংলাদেশের কৃষকদের জন্য ফুল উৎপাদন এখন অনেক বেশি লাভজনক হয়ে উঠেছে। অর্থসাশ্রয় ও মুনাফার দিক থেকে এখন ফুল চাষই সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের কৃষকদের জন্য ফুল চাষেই লাভ সবচেয়ে বেশি। এমনকি এ মুনাফার পরিমাণ ধান ও মাছের তুলনায়ও বেশি।

কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির দেশ বাংলাদেশ। দেশের মোট জিডিপিতে কৃষির অবদান প্রায় ২০ দশমিক ২৪ শতাংশ। জীবিকা অর্জনের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষি ও কৃষিসংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে জড়িত অনেকেই। কিন্তু দেশের কৃষকদের মধ্যে একদিক থেকে যেমন দারিদ্র্য রয়েছে, তেমনি রয়েছে অশিক্ষাও। এ কারণে ঋণ নিতে গিয়ে প্রায়ই নানা জটিলতায় পড়ছেন তারা। আর্থসামাজিক, পরিবেশ ও প্রযুক্তিগত বিভিন্ন কারণে নির্দিষ্ট সময় পরপর উৎপাদন ব্যবসায় পরিবর্তন আনছেন কৃষক। এ সময় যথাযথ তথ্যের অভাবের কারণে অনেকেই উপযুক্ত ও লাভজনক ব্যবসা বেছে নিতে পারেন না।

সাম্প্রতিক কালে দেশের কৃষকরা ধানের সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য ফসল যেমন— মাছ বা ফুল উৎপাদন করছেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহের জেলাগুলো ধানি জমি ও বদ্ধ জলে মাছ উৎপাদনে বেশ নাম করেছে। এখানকার অনেক কৃষকই এ কারণে তাদের চাষযোগ্য জমি কাটানোয় বেশ আগ্রহী হচ্ছেন। সম্প্রতি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, কৃষকরা বোরো চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন এবং সেখানে মত্স্য চাষের প্রসার ঘটছে। আগের বিভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে, বোরো ধান উৎপাদন আমনের তুলনায় বেশি লাভজনক। কিন্তু বোরো মৌসুমে ধানের যথাযথ দাম না পাওয়ায় ও বাড়তি খরচের কারণে কৃষকের প্রত্যাশা ও আশা-আকাঙ্ক্ষা ভেঙে পড়ছে। সমস্যাটির প্রধান কারণগুলো হলো— জমির অভাব, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, অকার্যকর ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি, মানসম্মত বীজের অভাব ও অপর্যাপ্ত ঋণসহায়তা। চালের দামেও এর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়েছে। ফলস্বরূপ, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ ও ফুল উৎপাদন বর্তমানে ধান উৎপাদনের তুলনায় বেশি লাভজনক হয়ে উঠেছে।

গবেষণার জন্য জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে, মত্স্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে মিশ্র পদ্ধতিতে চাষের জন্য কৃষকদের প্রতি হেক্টরে গড় মুনাফা থাকে প্রায় ৮১ হাজার ৯২৩ টাকা। অন্যতম লাভজনক মাছ শিং মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে হেক্টরপ্রতি মুনাফা দাঁড়ায় ৫ লাখ ৪১ হাজার ৬৪১ টাকা। হেক্টরপ্রতি মুনাফার দিক দিয়ে বোরো ও আমন ধানচাষীরাই সবচেয়ে বেশি পিছিয়ে। বোরো ধান উৎপাদনে হেক্টরপ্রতি মুনাফা থাকে গড়ে ৩০ হাজার ৩২৪ টাকা। আমনের ক্ষেত্রে এ মুনাফার পরিমাণ ১৬ হাজার ২৩১ টাকা। অন্যদিকে ফুল উৎপাদনের মাধ্যমে যশোরের গদখালীর কৃষকরা হেক্টরপ্রতি মুনাফা করছেন গড়ে প্রায় ১৬ লাখ ৫৭ হাজার ৮১৮ টাকা করে।

বাংলাদেশের মাছ, ফুল ও ধান উৎপাদনের তুলনামূলক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে গবেষণায় উঠে আসে, ফুল চাষেই মুনাফা সর্বাধিক। মাছ ও ধান উৎপাদনের তুলনায় এতে সাশ্রয়ও বেশি। বাংলাদেশে মাছ ও ধান উৎপাদনের অন্যতম সীমাবদ্ধতা হলো উভয় ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগের অভাব। এছাড়া রফতানিযোগ্য উৎপাদনের বাড়তি খরচ, বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের আবশ্যকতা ও বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষির এ দুই উপখাতে উৎপাদন কমে যাওয়ার জন্য দায়ী। কিন্তু ধান ও মাছ উৎপাদনে উন্নত প্রযুক্তি যেমন— জৈব প্রযুক্তি, জিনতত্ত্ব প্রকৌশল ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ক্ষেত্রে অগ্রগতির মাধ্যমে পর্যাপ্ত মাছ ও ধান উৎপাদন সমস্যার সমাধান সম্ভব। এটি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক হবে বলে আশা করা যায়। একই সঙ্গে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ফুল চাষ ও এর উন্নয়নের জন্য সরকারের বিশেষ প্রণোদনামূলক কার্যক্রমও হাতে নেয়া উচিত।

দেখা গেছে, সার প্রয়োগের ব্যয় সবচেয়ে কম ফুল চাষেই। বোরো ধান উৎপাদনের জন্য সার বাবদ হেক্টরপ্রতি গড় খরচ পড়ে ১৫ হাজার ১৮৬ টাকা। অন্যদিকে আমন ধানের ক্ষেত্রে এ খরচ পড়ে ১৪ হাজার ৩৪২ টাকা। যশোর জেলার গদখালী ইউনিয়নে বোরো ধান চাষের জন্য চাষীদের গড় খরচ পড়ে হেক্টরপ্রতি ১ লাখ ৪ হাজার ৫৩৮ টাকা। আমন ধান চাষে খরচ পড়ে ৭৪ হাজার ২৫৫ টাকা। মাছ চাষের ক্ষেত্রে সারের খরচ পড়ে প্রতি হেক্টরে মিশ্র মাছ চাষের ক্ষেত্রে ৬৭ হাজার ৬৮৬ টাকা। শিং মাছের ক্ষেত্রে এ খরচ ১৯ হাজার ৫৪০ টাকা। পুষ্টিকর ও গুণগত মানসম্পন্ন মাছ চাষের জন্য উন্নত মানের সার ও ওষুধের প্রয়োজন হয়। এ কারণে মাছ চাষে ব্যবহূত সারের হেক্টরপ্রতি খরচ তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে বেশি। ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে দেখা গেছে, এখানে মিশ্র পদ্ধতিতে মাছ চাষের জন্য প্রতি হেক্টর গড়ে প্রায় ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭৩ টাকা খরচ হয়। অন্যদিকে শিং মাছ চাষে প্রতি হেক্টরে খরচ পড়ে ৬ লাখ ৭৪ হাজার ২৩৫ টাকা। অন্যদিকে ফুল চাষের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, এতে ব্যবহূত সারের খরচ পড়ে হেক্টরপ্রতি ১২ হাজার ৭৪১ টাকা করে। গদখালীর কৃষকদের ফুল চাষে হেক্টরপ্রতি খরচ হয় ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫ টাকা।

বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মতে, মোট কৃষি খাতের ৩৫-৪০ শতাংশ উৎপাদন এ খাতে হয়, যা মোট জিডিপির ৭-৮ শতাংশ। সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে চাহিদা মেটানোর জন্য বাংলাদেশের কৃষকরা বাণিজ্যিক মাত্রায় ফুল চাষ শুরু করেছেন। যশোর জেলার গদখালী ইউনিয়নে কৃষকরা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় বাজারের জন্য উন্নত মানের ফুল চাষ শুরু করেছেন। এতে নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় সাড়ে চার হাজার কৃষক। বর্তমানে বাংলাদেশের মোট ফুল উৎপাদনের অর্ধেকেরও বেশি আসছে যশোর থেকে। উৎপাদন উপযোগী মাটি ও আবহাওয়ার কারণে এ অঞ্চলের জমি ধান ও ফুল উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত। একইভাবে ধানের জমিতে মাছও উৎপাদন করা যায়। কিন্তু অপর্যাপ্ত ও অনুন্নত পরিবহন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা এ খাতের উন্নয়নের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মত্স্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের অভাবে কৃষকরা প্রত্যাশিত   মুনাফা অর্জন করতে পারছেন না।

লাভজনক হলেও ফুল চাষ এখন বাংলাদেশে বর্ধনশীল পর্যায়ে রয়েছে। দেশে ফুলের বাজারের সবচেয়ে বড় আড়ত হিসেবে পরিচিত শাহবাগ। কিন্তু শাহবাগের ফুলের বাজারের অদক্ষ অবকাঠামোগত ব্যবস্থা ও ফুল সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাব, উৎপাদনস্থল থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ফুলের সময়সাপেক্ষ পরিবহন ব্যবস্থা এবং স্থানীয় বাজারে আমদানি করা প্লাস্টিক ফুলের অধিক সরবরাহের কারণে দেশী তাজা ফুলের যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে না। আবার ফুলচাষীদের অনেক সময় কার্গোসংক্রান্ত জটিলতা ও রফতানি বাজারের অনিশ্চয়তার কারণেও বাধার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে কৃষি ফসলের পরিবর্তে মাছ বা ফুল চাষের মুনাফাযোগ্যতা ও স্থানীয় পর্যায়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নে এর প্রভাব জানার জন্য তুলনামূলক বিশ্লেষণ সংশ্লিষ্ট সবার জন্যই মঙ্গলজনক।

 
লেখক: ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী। উল্লিখিত গবেষণাটি তারই করা। গবেষণা তত্ত্বাবধান করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আসরারুল ইসলাম চৌধুরী


source: http://bonikbarta.net
Regards,
Md. Rashadul Islam
Operation Manager
Bangladesh Venture Capital Ltd.