Author Topic: ব্র্যান্ড থেকে শেয়ারহোল্ডারের প্রাপ্তি  (Read 3086 times)

Rashadul Islam

  • Administrator
  • Newbie
  • *****
  • Posts: 45
  • Karma: +0/-0
    • View Profile


আধুনিক যুগের ব্যবসা-বাণিজ্যে কোম্পানির কৌশলগত প্রতিটি পরিকল্পনার সময়ই কোনো না কোনোভাবে চলে আসে ব্র্যান্ড ভ্যালু। এর শাস্ত্রীয় সংজ্ঞায় অনেক কিছুই বলা হয়। সহজ ভাষায় বললে, বিদ্যমান বা সম্ভাব্য ক্রেতা একটি কোম্পানি এবং তাদের পণ্য বা সেবাকে কী চোখে দেখে তা-ই তাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু। ভালো ব্র্যান্ড কোম্পানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। আবার দুর্বল ব্র্যান্ডকে ঠিক উল্টো ভূমিকায় দেখা যেতে পারে। নতুন শতকে এসে একটি ট্রেন্ড খুবই স্পষ্ট, যে কোম্পানির সামগ্রিক সম্পদ কাঠামোয় ব্র্যান্ডের মতো অস্পৃশ্য সম্পদের অবদান বেশি, তারাই অন্যদের তুলনায় বেশি ক্যাশ ফ্লো জেনারেট করছে। প্রফিটেবিলিটিতেও তারা অন্যদের ছাড়িয়ে যাচ্ছে। শেয়ারবাজারও জানে এর অর্থ কী...
২০১২ সালে স্টকহোম স্কুল অব ইকোনমিকসের একদল গবেষক দেখিয়েছেন, শক্তিশালী ও মূল্যবান ব্র্যান্ডের মালিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ করলে দীর্ঘমেয়াদে বেশি রিটার্ন আসে। একই সঙ্গে এ ধরনের কোম্পানিগুলোর শেয়ার নিয়ে গঠন করা পোর্টফোলিওর ঝুঁকিও তুলনামূলক কম।

২০০৫ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ইউরোপীয় কোম্পানির ব্র্যান্ড ইকুইটি, ব্যবসায়িক উপাত্ত আর শেয়ারের রিটার্ন পর্যালোচনা করে আলেক্সান্ডার এঙ্গেল ও জোয়াকিম আমাদিউস ওলসন নামে দুই গবেষক জানান, শক্তিশালী ব্র্যান্ডের মালিক প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার নিয়ে গঠিত পোর্টফোলিওটি সূচক ও অন্যান্য পোর্টফোলিওর চেয়ে বেশি রিটার্ন দিয়েছে। গড়ে বার্ষিক রিটার্ন ১২ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি ছিল। অন্যদিকে সে পোর্টফোলিওর বেটা মান অন্যান্য কম্পোজিশনের পোর্টফোলিও, এমনকি বাজারের গড় বেটার চেয়েও কম ছিল। এর অর্থ হলো, তুলনামূলক কম ঝুঁকি নিয়ে শক্তিশালী ব্র্যান্ডের কোম্পানিগুলোর শেয়ার থেকে দীর্ঘমেয়াদে অনেক বেশি রিটার্ন পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। কম বেটা আর বেশি আলফা, দক্ষ ফান্ড ম্যানেজারের সাধনাই তো এখানে।

প্রশ্ন আসাই স্বাভাবিক, কেন এমনটি হয়।

উত্তরে প্রথমেই বলতে হবে, ব্র্যান্ড ভ্যালু এমন একটি সম্পদ, যা কোম্পানির সেলস টিমের কষ্ট কমায়। ভালো ব্র্যান্ডের প্রতি সন্তুষ্ট ক্রেতারা অনুগত থাকেন, ভালো ব্র্যান্ডের রয়েছে সশ্রদ্ধ পরিচিতি, ভালো ব্র্যান্ড পণ্য বা সেবার মান সম্পর্কে ক্রেতার সন্দেহ দূর করে। এছাড়া প্রতিযোগিতার বাজারে ভালো ব্র্যান্ড কোম্পানির স্ট্র্যাটেজিস্টদের বাড়তি শক্তি হিসেবে কাজ করে, যা তাদের প্রিমিয়াম প্রাইস নির্ধারণেও সাহস জোগায়। বিক্রির বিপরীতে হিসাব করলে দেখা যাবে প্রমোশনের পেছনে খরচ কমাতেও ভূমিকা রাখে একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড। এর উদাহরণ আমরা প্রতিদিনই দেখছি। সাধারণ ব্র্যান্ডের পণ্যে যখন একটির সঙ্গে একটি ফ্রি বা বড়সড় ডিসকাউন্ট অফার থাকছে, শক্তিশালী অনেক ব্র্যান্ড এ ধরনের ছাড় না দিয়েও ভালো ব্যবসা করে যাচ্ছে।

অর্থাৎ কোম্পানির প্রফিটেবিলিটি ও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান সবখানেই ব্র্যান্ড একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

তবে ব্র্যান্ড ভ্যালুর জন্য দীর্ঘদিন বিনিয়োগ করতে হয়। সে বিনিয়োগ আর্থিকও হয়, মেধারও হয়, আবার স্বল্পমেয়াদে অনেক ত্যাগ তিতিক্ষারও বিষয়। বিপরীতে কোম্পানি তার পণ্য বা সেবার প্রতি বর্তমান ও সম্ভাব্য ক্রেতার শ্রদ্ধাবোধ অর্জন করে। যুগপৎ বিক্রি ও মুনাফা বাড়ানোর যুদ্ধে এ শ্রদ্ধাবোধ একটি কোম্পানিকে কতটা এগিয়ে দিতে পারে কোকাকোলা, অ্যাপল, স্যামসাং, গুগল, জিলেট, টয়োটা, বিএমডব্লিউ বা হোন্ডার মতো কোম্পানিগুলো তার সবচেয়ে সহজবোধ্য উদাহরণ। আমাদের দেশে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বার্জার পেইন্টস, গ্রামীণফোনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্র্যান্ড ভ্যালু আর বিক্রয় প্রবৃদ্ধির দিকে তাকালেও বিষয়টি অনুমেয়।

ব্র্যান্ড ইকুইটি

কোম্পানির ইকুইটির মতো একটি ব্র্যান্ডের সম্পদ ও দায়ের সমন্বয়কেই ব্র্যান্ড ইকুইটি বলে অভিহিত করা হয়। এ সম্পদ ও দায়কে পাঁচটি মূল ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়, ব্র্যান্ড লয়্যালটি বা ব্র্যান্ডের প্রতি ক্রেতার আনুগত্য, নাম পরিচিতি, প্রত্যাশিত মান, ব্র্যান্ডের সঙ্গে ক্রেতার সংযুক্তি এবং নাম, প্রতীক, লোগোসহ অন্যান্য সম্পদ।

যে ব্র্যান্ড কোম্পানির বিক্রি ও মুনাফা বাড়াতে যত বেশি ভূমিকা রাখে তার ব্র্যান্ড ইকুইটি তত বেশি। বিনিয়োগকারীদের কাছে নিজেদের যথাযথভাবে তুলে ধরতে আশির দশক থেকেই কোম্পানিগুলো তাদের ব্র্যান্ডের ভ্যালুয়েশনের পেছনে ছুটছে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইন্টারব্র্যান্ডের হাত ধরেই এ সেবার সূচনা এবং আজ পর্যন্ত তারাই ব্র্যান্ডের ভ্যালুয়েশনে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য নাম।

ব্র্যান্ডের মূল্য নির্ধারণে দুটি সহজ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়: প্রথম পদ্ধতিতে হিসাব করে দেখা হয়, তৃতীয় কোনো কোম্পানির কাছ থেকে নিয়ে ব্র্যান্ডটি ব্যবহার করলে বিক্রির বিপরীতে ফি আকারে যে অর্থ ব্যয় হতো তার ভিত্তিতে। বিষয়টি অনেকটা শেয়ারবাজারে রিলেটিভ ভ্যালুয়েশনের মতো।

দ্বিতীয় পদ্ধতিটিকে অ্যাবসলিউট ভ্যালুয়েশন বলা যায়, যা ইন্টারব্র্যান্ড ব্যবহার করে থাকে। এখানে ইন্টারব্র্যান্ড তিনটি বিষয় হিসাব করে দেখে। প্রথমত. ব্র্যান্ডটি কোম্পানির পণ্য ও সেবার আর্থিক পারফরম্যান্সকে কীভাবে প্রভাবিত করে। দ্বিতীয়ত. ভোক্তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ তথা বাছাই প্রক্রিয়ায় ব্র্যান্ডটির ভূমিকা কতটা। তৃতীয়ত. মূল্য নির্ধারণে ব্র্যান্ডটি কোম্পানিটিকে কতটা প্রিমিয়াম রাখার সুযোগ করে দেয়।

সুইডেনের গবেষকদ্বয়ের অনুসন্ধানে মূলত ইন্টারব্র্যান্ডের ব্র্যান্ড ইকুইটি টেবিল ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আমরা শেয়ার কেনাবেচার জন্য এমন টেবিল কোথায় পাব?

উত্তর হলো, আমাদের শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর অধীন ব্র্যান্ডগুলোর আক্ষরিক ভ্যালুয়েশন হয়তো করতে পারব না। তবে ইন্টারব্র্যান্ডের মতো এ প্রশ্নগুলো আমরাও করতে পারি। এর আক্ষরিক উত্তর হয়তো পাব না। তবে পরিবার ও বন্ধুদের মহলে একটি ছোট্ট জরিপ চালিয়েও কয়েকটি ব্র্যান্ডের মধ্যে একটি র্যাংকিং করে ফেলা সম্ভব হবে। ভালো ব্র্যান্ডের জন্য শেয়ারের ভ্যালুয়েশনে কিছু প্রিমিয়াম আর দুর্বল ব্র্যান্ডের জন্য ডিসকাউন্টের চর্চা আমরাও করতে পারি।

ম্যানেজমেন্টের দক্ষতা, সুশাসন ও ব্র্যান্ড ভ্যালু

কল্পনা করুন, একটি কোম্পানির অধীন ব্র্যান্ডগুলো খুবই শক্তিশালী ও মূল্যবান। কিন্তু তাদের ম্যানেজমেন্ট দুর্বল কিংবা করপোরেট সুশাসন যাচ্ছেতাই রকমের। খুঁজলে দেখা যাবে তা খুবই বিরল। কারণ এগুলো একসঙ্গেই পথ চলে।

শক্তিশালী ব্র্যান্ড কোম্পানির বিক্রি ও মুনাফা বাড়াতে ব্যর্থ হলে ধরে নিতে হবে, এটি ম্যানেজমেন্ট ফেইলিওর। আবার এ দুটোই ঠিক থাকার পরও দীর্ঘমেয়াদে শেয়ারহোল্ডাররা মুনাফাবঞ্চিত হলে করপোরেট সুশাসনকেই এজন্য দায়ী করা যেতে পারে।

সতর্কতা

ব্র্যান্ড ইকুইটির বা গুডউইলের হিসাব-নিকাশের উপাত্ত অবশ্যই বাস্তবতার নিরিখে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। মনগড়া অস্পৃশ্য সম্পদের বলি হওয়া যাবে না। তবে এটিও সত্য, একজন ভোক্তা বা ক্রেতা হিসেবে আমরা ঠিকই অনুধাবন করতে পারি, একটি কোম্পানির ব্র্যান্ডগুলো আমাদের মনে কত ইতিবাচক অবস্থান করে নিতে পেরেছে।

সব ভালোরই একটি শেষ আছে। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্র্যান্ডগুলোর মালিক কোম্পানির শেয়ারও যদি চরম অতিমূল্যায়িত হয়, সময়-সুযোগ মতো সেখানেও দর সংশোধন হতে পারে। এর জন্য প্রস্তুতি না নিয়ে উচ্চমূল্যে শেয়ার কিনে বসলে স্বল্পমেয়াদে বিনিয়োগকারীর হতাশা বাড়তে পারে। তবে কম বেটা আর উচ্চ আলফার পরিসংখ্যান আশাবাদী করে, দীর্ঘমেয়াদে ভালো ব্র্যান্ড ইকুইটির মালিক কোম্পানিগুলোর শেয়ার বিনিয়োগকারীদের ভালো রিটার্ন দেয়।


source:http://bonikbarta.net
Regards,
Md. Rashadul Islam
Operation Manager
Bangladesh Venture Capital Ltd.