BVCL Forum

Leadership => Successful Story => Topic started by: Rashadul Islam on February 26, 2018, 05:32:50 PM

Title: বিগবাজার: ভারতে সত্যিকারের বিগশট
Post by: Rashadul Islam on February 26, 2018, 05:32:50 PM
(https://bonikbarta.net/bangla/uploads/news/2018/02/base_1519412106-d.jpg)
Quote
রিটেইলিং স্টাইল পছন্দ না হওয়ায় ইন্ডিয়ান রিটেইল ফোরাম একসময় কিশোর বিয়ানিকে সদস্য করতেও আপত্তি জানিয়েছে। কিন্তু বিগবাজারের ঈর্ষণীয় সাফল্যের কারণে তারাই কিশোরকে বরণ ও পুরস্কৃত করতে বাধ্য হয়েছে।
যারা ভালো ম্যানেজার হতে চান তাদের জন্য বিজনেস স্কুল; উদ্যোক্তার সেখানে শেখার কিছু নেই। একথা বলেছেন কিশোর বিয়ানি। মুম্বাইয়ের এইচআর কলেজে কমার্সের ছাত্র থাকাকালে ক্লাস ফাঁকির যুক্তি দেখাতে তিনি কথাটি বলেন। কিশোর বিয়ানি এ মন্তব্য করতে পারেন। কারণ উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি নিজেকে দারুণভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ভারতে রিটেইলিংয়ের সংজ্ঞা পাল্টে দিয়েছে তার হাইপারমার্কেট চেইন বিগবাজার। সবশেষ অর্থবছরে ৩৬৮ কোটি রুপি নিট মুনাফা করেছে প্রতিষ্ঠানটি, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় দ্বিগুণ।

ভারতে ব্যাপকভিত্তিক রিটেইলিংয়ের পুরোধা প্রতিষ্ঠান বিগবাজার। ভারতের ২৬টি প্রদেশে বিগবাজার হাইপারমার্কেট মোট ২৫৩টি। চলতি অর্থবছরে আরো ১০০ বিগবাজার উদ্বোধনের পরিকল্পনা জানিয়েছে কিশোর বিয়ানির কোম্পানি ফিউচার রিটেইল লিমিটেড। কিন্তু এটাই কিশোর বিয়ানির একমাত্র ব্যবসা নয়। তার মস্তিষ্কপ্রসূত অ্যাপারেল চেইন প্যান্টালুনস, সুপারমার্কেট চেইন ফুডবাজার, ডিসকাউন্ট অ্যাপারেল চেইন ব্র্যান্ড ফ্যাক্টরি, স্যুটিং চেইন টপ টেন, ব্লু স্কাই, স্টার অ্যান্ড সিতারার পাশাপাশি নতুন হয়েছে স্মল স্টোর চেইন ইজিডে। ২০১৬ সালে সুনীল মিত্তালের ভারতী গ্রুপ থেকে কেনা ভারতীমার্টের ৫৭১টি স্টোরকে ইজিডেতে রূপান্তর করা হয়েছে। ফ্যাশন লেবেল ইন্ডিগো নেশন, স্প্যালডিং, লোমবার্ড, বেয়ার ছাড়াও ফিউচার রিটেইলের রয়েছে কনজিউমার ব্র্যান্ড টেস্টি ট্রিট, ফ্রেশ অ্যান্ড পিওর, পুন্য, স্যাশ, সানকিস্ট, ক্লিন মেট, কেয়ার মেট, একতা ও প্রিমিয়াম হারভেস্ট। ফিউচার রিটেইলের উপস্থিতি রয়েছে বীমা খাতেও।

ব্যবসার এ বৈচিত্র্য থেকে কিশোর বিয়ানিকে চেনা যায়। পুঁজিবাজার, ফিল্মপাড়াসহ বহু জায়গায় তিনি জড়িত হয়েছেন। ড্যান্স ফেস্টিভ্যাল আয়োজনের ব্যবসাও করেছেন। কিন্তু সবশেষে থিতু হয়েছেন রিটেইলিংয়ে। শিরায় মাড়োয়ারি রক্ত বইছে বলেই হয়তো উদ্যোগের এমন নেশা তার। ব্যবসায়ের ঝোঁকটি তিনি পেয়েছেন পরিবার থেকেই। রাজস্থান ছেড়ে মহারাষ্ট্রের মালাবারে আসে তার পূর্বপুরুষ। ধীরুভাই আম্বানির মতো রেশম কাপড়ের ব্যবসা করতেন কিশোর বিয়ানির দাদা। পারিবারিক মালিকানার বানসি সিল্ক মিলে কাজ করতেন কিশোরের বাবা-চাচারা। এইচআর কলেজে পড়ার সময় ক্লাস থেকে বেরিয়ে আড্ডা ও ঘোরাঘুরি করতেন কিশোর। চারপাশের মানুষের জীবনধারা লক্ষ করতেন। অধীর অপেক্ষার পর গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন হলে তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস নেন। কিন্তু সেটা ছিল সাময়িক। অন্য কাজিনদের মতো প্রতিদিন সিল্ক মিলের অফিসে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয় তাকেও। পারিবারিক ব্যবসাটি তার সেকেলে মনে হতো। একই ভাবনা ছিল বিয়ানি পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের আরো কয়েকজনের। কিন্তু কিশোরের মনে হতো তারাও রক্ষণশীল চিন্তায় বাঁধা পড়ে আছেন; সাহসী উদ্যোগের কথা কেউ বলছেন না। এরই মধ্যে ১৯৮৩ সালে কিশোর বিয়ে করেন। বিষয়টিকে তিনি পারিবারিক ব্যবসার অর্গল ভাঙার সুযোগ হিসেবে কাজে লাগান।

বন্ধুদের পরনে স্টোনওয়াশড প্যান্ট আগেই দেখেছিলেন। বিয়ের পর তিনিও হাল ফ্যাশনের বাজার ধরতে উদ্যোগী হন। একটি কারখানায় পছন্দের কাপড় খুঁজে বের করে নিজের মনমতো ডায়িং করেন। হোয়াইট, ব্রাউন অ্যান্ড ব্ল্যাক— তিন রঙের কাপড় বিক্রি করবেন বলে ব্র্যান্ডের নাম দেন ডব্লিউবিবি। ধুন্দুমার কাটতি হয় ওই কাপড়ের। কিছুদিনের মধ্যে তিনি নিজেই প্যান্ট তৈরি করে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। এজন্য ১৯৮৭ সালে ব্র্যান্ডজওয়্যার নামে কোম্পানি গঠন করেন। ব্র্যান্ডের নাম দেন প্যান্টালুন। নামটি বেছে নেন, কারণ শুনতে ইতালীয় মনে হয়। আবার উর্দুতে প্যান্টালুন বলতে প্যান্ট বোঝায়। পোশাকের কয়েকটি দোকানে সরবরাহের মাধ্যমে প্যান্টালুন ব্র্যান্ডের বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট না হওয়ায় ফ্র্যাঞ্চাইজির ভিত্তিতে বিক্রির উদ্যোগ নেন কিশোর। এরপর ১৯৯১ সালে গোয়ায় প্রথম নিজস্ব প্যান্টালুন শপ উদ্বোধন করেন তিনি। পরের বছর কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করেন। ক্রেতা ও বিনিয়োগকারী উভয়পক্ষের সাড়া পাওয়ায় প্যান্টালুন স্টোরের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ১৯৯৬ সাল নাগাদ চেইনটি এত বেশি জায়গায় বিস্তৃত হয় যে, কোম্পানির পক্ষে সব স্টোর পরিদর্শন ও দেখভাল সম্ভব হচ্ছিল না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কিশোর বিয়ানি প্যান্টালুনকে বড় পরিসরের রিটেইল আউটলেটে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেন।

কলকাতায় ১০ হাজার বর্গফুটের একটি স্পেসের খোঁজ পান কিশোর বিয়ানি। পশ্চিমবঙ্গের প্রধান শহরটিতে স্টোরগুলোর গড় আয়তন ছিল চার হাজার বর্গফুট। সেখানে এত বড় জায়গা পেয়ে তিনি হাতছাড়া করেননি। ১৯৯৭ সালে কলকাতায় উদ্বোধন করা হয় প্যান্টালুনস ডিপার্টমেন্ট স্টোর। তত দিনে ভারতে স্যাটেলাইট টেলিভিশন নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হয়ে উঠেছে। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বাজার অর্থনীতির পথে যাত্রার ধারায় একটি মধ্যবিত্ত শ্রেণীও বিকাশমান হয়ে উঠেছে। স্টোরগুলোয় তরুণ ও যুবকশ্রেণীর আনাগোনা বাড়ছিল। এসব বিবেচনায় নিয়ে বড় পরিসরে রিটেইলিংয়ের জন্য কিশোর নেন হাইপারমার্কেট উদ্বোধনের প্রস্তুতি। ২০০১ সালে কলকাতায় প্রথম বিগবাজার আউটলেট উদ্বোধন হয়। পরবর্তী ২২ দিনে খোলা হয় আরো দুটি বিগবাজার। ২০০২-০৩ মৌসুমে পর পর দুটি হিন্দি ছবি প্রযোজনায় লোকসান দেন কিশোর বিয়ানি। এরপর শুরু হয় ভারতীয় অর্থনীতির শ্লথগতি। এদিকে চেইনের অতি দ্রুত ও বাছবিচারহীন বিস্তৃতির কারণে কোম্পানির ঋণ ও দেনা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে ২০১২ সালে প্যান্টালুনের ৫১ ভাগ মালিকানা আদিত্য বিড়লা গ্রুপের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হন কিশোর বিয়ানি। তবে বছর ঘুরতেই তিনি ঘুরে দাঁড়ান।

কিশোর বিয়ানিকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করে বিগবাজার। গোড়া থেকে দারুণ পারঙ্গমতায় ব্যবসাটি পরিচালনা করেছেন তিনি। রিটেইলিং স্টাইল পছন্দ না হওয়ায় ইন্ডিয়ান রিটেইল ফোরাম একসময় কিশোর বিয়ানিকে সদস্য করতেও আপত্তি জানিয়েছে। কিন্তু বিগবাজারের ঈর্ষণীয় সাফল্যের কারণে তারাই কিশোরকে বরণ ও পুরস্কৃত করতে বাধ্য হয়েছে। বহুজাতিক রিটেইল আউটলেটের চেয়ে পুরোপুরি ভিন্ন ঘরানার স্টোর বিগবাজার। অন্যরা যখন ছিমছাম স্টোর ডিজাইনে জোর দেন, কিশোর তখন বিগবাজারকে সাজিয়েছেন কিছুটা ঘিঞ্জি চেহারায়। ভোক্তারা যাতে সনাতন ভারতীয় মুদি ও ডিপার্টমেন্ট স্টোরের সঙ্গে মিল খুঁজে পান, সেজন্য এ কৌশল। ভারতে প্রতিনিয়ত মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরমুখী হচ্ছে। জীবিকার তাগিদে শিকড়ছেঁড়া এসব মানুষই হয়ে উঠছে বর্ধিষ্ণু মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অংশ। মধ্যবিত্ত মনস্তত্ত্বে নানা জটিলতা কাজ করে, ঝুঁকি থাকে হীনম্মন্যতা দানা বাঁধার। উঠতি মধ্যবিত্তরা যাতে বিক্রয়কর্মীর অতি সুবেশ ও কেতাদুরস্ত ভাব দেখে অস্বস্তি বোধ না করেন, সেজন্য বিগবাজার কর্মীদের নিজেকে সাধারণভাবে উপস্থাপনের বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়। বহুজাতিক চেইন ও কোম্পানিগুলো প্রচারণার পেছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে। কিন্তু বিগবাজার কম প্রচারণাতেই তাদের চেয়ে বেশি সাড়া পায়। এর কারণ হলো, বিগবাজার কখনো হিন্দি ছাড়া অন্য ভাষায় বিজ্ঞাপন নির্মাণ বা ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেনি। সালকা সাবসে সাস্তা দিন অথবা সাবসে সাস্তা বুধবার, এমন শিরোনামের প্রমোশনে সহজেই ভারতের এক-তৃতীয়াংশ মানুষকে নিজের দিকে টানার রেকর্ড করেছে বিগবাজার।

বিগবাজারের সাফল্যে ভর করে ফিউচার রিটেইল জড়িত হয়েছে টেলিকম, ই-রিটেইলিং, ফুড প্রসেসিং, ইলেকট্রনিকসসহ নানা ব্যবসায়। কিশোর বিয়ানির ও তার সৃষ্ট ব্র্যান্ডগুলোর ঝুলিতে এসেছে ভারতের ভেতর-বাইরের অর্ধশতাধিক পুরস্কার। ভারতের নাগরিকদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির ধারায় ক্রমে আরো দূরের গন্তব্যে দৃষ্টি নিবদ্ধ করছে বিগবাজার।


গ্রন্থনা: সাঈদ হাসান
(http://bonikbarta.net)