BVCL Forum

Investment Opportunity => Policy and acts => Topic started by: Rashadul Islam on March 16, 2018, 12:49:43 AM

Title: হিরো অ্যাকাউন্ট্যান্ট ভিলেন অ্যাকাউন্ট্যান্ট
Post by: Rashadul Islam on March 16, 2018, 12:49:43 AM
(https://bonikbarta.net/bangla/uploads/news/2017/12/base_1512826844-xfy54.jpg)
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের আদিতে হিসাববিদ্যা শুধু বুককিপিংয়েই সীমাবন্ধ ছিল। জমা-খরচের হিসাব রাখাই ছিল এ শাস্ত্রের মূল কাজ। সময়ের পরিক্রমায় হিসাবরক্ষণ হলো হিসাববিজ্ঞান, এখন তা হিসাব ও তথ্যবিজ্ঞান। এর রয়েছে নানা শাখা-উপশাখা। একদল অ্যাকাউন্ট্যান্ট কোম্পানির অভ্যন্তরীণ হিসাব বিভাগ সামলাচ্ছেন, তো অন্য একদল তাদের কার্যক্রমের নিরীক্ষা করছেন। তৃতীয় আরেকটি দল বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে উভয় পক্ষের দেয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সিকিউরিটিজের মূল্য নির্ধারণ করছেন। চতুর্থ দলটি নিয়ন্ত্রক সংস্থায় বসে তিন পক্ষকেই নজরে রাখছেন।

আধুনিক যুগে অভ্যন্তরীণ অ্যাকাউন্ট্যান্টদের প্রাথমিক দায়িত্ব প্রতিষ্ঠানের হিসাব রক্ষণ, আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত, যথাযথ চ্যানেলে রিপোর্টিং ও এসবের ব্যাখ্যা প্রদান। ব্যাখ্যার অংশ হিসেবে ম্যানেজমেন্টের চাহিদা অনুযায়ী কোম্পানির হিসাব-নিকাশ ও আর্থিক অবস্থার নানা উপস্থাপন করেন তারা। বিনিয়োগকারীরাও তাদের হিসাব-নিকাশের ব্যাখ্যা চাইতে পারেন, নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা তো বটেই।

বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিকোণ থেকে বহিঃনিরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত পেশাদার অ্যাকাউন্ট্যান্টরা আরো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা দেখেন, অভ্যন্তরীণ অ্যাকাউন্ট্যান্টরা যা প্রকাশ করেছেন, তা কতটুকু সত্য। কোম্পানির হিসাব বিভাগের উপস্থাপন হিসাব মানদণ্ডের আলোকে যথার্থ কিনা। সেখানে কোনো ব্যত্যয় রয়েছে কিনা, যা শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

গত এক শতকে আর্থিক বাজারের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, সফল বিনিয়োগকারীদের প্রত্যেকেই অ্যাকাউন্টিংয়ে যথেষ্ট দখল রাখেন। আধুনিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামোয় অ্যাকাউন্ট্যান্ট শুধু নিজ কোম্পানির হিসাব-নিকাশ রাখেন, তেমন নয়। তারা বরং বিশ্লেষণী কার্যক্রমের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। অ্যাকাউন্টিং, ফিন্যান্স, নিরীক্ষা, ম্যানেজমেন্ট পর্যালোচনা ইত্যাদি ভিন্ন ভিন্ন স্কিলের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হয় বিশ্বসেরা ইকুইটি রিসার্চ টিমগুলো।

আধুনিক যুগের আর্থিক বাজারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, নিয়ন্ত্রক সংস্থায়ও বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান ও দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের পদচারণা। উন্নত বিশ্বের বেশির ভাগ দেশেই একাডেমিক রিসার্চ, ইন্ডাস্ট্রির ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা ও পেশাদারিত্বে সমন্বয়ে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের মতো রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তোলা হয়। আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থায়ও বিভিন্ন পদে অ্যাকাউন্ট্যান্টদের সক্রিয়তা প্রশংসনীয়।

প্রতিটি ক্ষেত্রেই অ্যাকাউন্টিং স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা নিজের পেশাগত নৈতিকতা ধরে রেখে আধুনিক যুগের অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য সর্বোপরি আর্থিক ব্যবস্থাকে এগিয়ে নেয়ায় ভূমিকা রাখছেন। গণমাধ্যমের কল্যাণে এ যুগে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী, মুখপাত্র, প্রধান বিপণন কর্মকর্তারা রীতিমতো তারকাখ্যাতি পেয়ে গেলেও খানিকটা নীরবেই গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করে যান অ্যাকাউন্ট্যান্টরা। তারা আর্থিক বাজারের আনসাং হিরো। তাদের হাত যত শক্তিশালী হবে, বাজার তত সুন্দর হবে।

ভিলেন অ্যাকাউন্ট্যান্ট

ইন্টারনাল

হিসাব বিভাগে কর্মরত অ্যাকাউন্ট্যান্ট প্রথমে তার প্রতিষ্ঠানের দেয়া দায়িত্ব পালন করেন। আর্থিক তথ্য-উপাত্তের যথাসংরক্ষণ, বিবরণী প্রস্তুত ও উপস্থাপনের পাশাপাশি প্রতিটি কর্মকাণ্ডে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ম্যানেজমেন্টকে তথ্য ও ব্যাখ্যা দিয়ে সাহায্য করেন অ্যাকাউন্ট্যান্ট। কোম্পানির শেয়ারহোল্ডারদের সবচেয়ে বড় ভরসার স্থলও তিনি। কারণ তার দেয়া উপাত্তের ভিত্তিতেই শেয়ারের দর নির্ধারণ হয়। যথাযথ করের অংক নির্ধারণ করে রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতি প্রত্যক্ষ দায়বদ্ধতার পরিপালন করেন অভ্যন্তরীণ অ্যাকাউন্ট্যান্ট। কোনো এক জায়গায় যদি তিনি ব্যত্যয় ঘটান, তাহলেই তিনি ভিলেন। তার হিসাব-নিকাশে কোম্পানি, রাষ্ট্র, শেয়ারহোল্ডার কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া চলবে না।

একেকটি আর্থিক কেলেঙ্কারির রহস্য উন্মোচনের পর দেখা যায়, বিনিয়োগকারীদের চোখে সবচেয়ে বড় ভিলেন হয়ে দাঁড়ান সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট। সিংহভাগ ক্ষেত্রেই ইন্টারনাল অ্যাকাউন্ট্যান্ট কোম্পনির ঊর্ধ্বতনদের অন্যায্য চাহিদায় সাড়া দেন ফল ভাগাভাগির অলিখিত শর্তে। সেটি হতে পারে নগদ ইনসেনটিভ, হতে পারে ইনসাইডার ট্রেডিংয়ের প্রত্যক্ষ বা প্রচ্ছন্ন সুযোগ। কিছু ক্ষেত্রে দুর্বলচিত্ত অ্যাকাউন্ট্যান্টরা নিছক আজ্ঞাবহের মতো ‘উপরের নির্দেশ’ মেনে হিসাব প্রতিবেদন উপস্থাপন করে চলেন। তিনি দুরভিসন্ধির অংশীদার না হলেও ওয়াকিবহাল বটে। ভিলেনদের মুখোশ উন্মোচনের সুযোগ তার সামনেও কিন্তু আসে। তাকে ভিলেন অ্যাকাউন্ট্যান্ট বলতে না চাইলেও ভিলেনের সহযোগী বলতেই হবে।

এক্সটার্নাল

ইন্টারনাল অ্যাকাউন্ট্যান্টদের মতো একইভাবে শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থরক্ষার পবিত্র দায়িত্বের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন ভিলেন নিরীক্ষকরা। দুরভিসন্ধিমূলক অভ্যন্তরীণ হিসাব প্রতিবেদনের ত্রুটিগুলো শনাক্ত না করে তিনি জানা-অজানা কোনো কারণে তাতে সই করে দিলেন। এদিকে শেয়ারহোল্ডারসহ সবাই বিশ্বাস করে আছেন, নিরীক্ষক কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের সত্যতা যাচাই করেই সই-স্বাক্ষর করেছেন। সুতরাং কোম্পানির দেখানো উপাত্তের ভিত্তিতে এর শেয়ারদর নির্ধারণ করা যায়। অর্থাৎ শেয়ারহোল্ডার প্রতারিত হয়েছেন।

ফান্ড ম্যানেজার

কোম্পানির হিসাব প্রতিবেদন পড়ে একজন পেশাদার ফান্ড ম্যানেজার যখন বুঝতে পারেন, সেখানে প্রকৃত অবস্থার প্রতিফলন ঘটছে না, কোড অব এথিকস বলে, তার সেখানে বিনিয়োগ করা উচিত নয়। কারণ ফান্ডের বিনিয়োগকারীদের সম্পদকে ঝুঁঁকির মুখে ফেলার কোনো অধিকার তার নেই। তার পরও সে ফান্ড ম্যানেজার যদি বিনিয়োগকারীর প্রতি তার দায়বোধ ভুলে গিয়ে নিছক রিটার্ন সর্বোচ্চকরণের মোহে ইন্টারনাল ও এক্সটার্নাল ভিলেন অ্যাকাউন্ট্যান্টদের পাতা ফাঁদে পা দেন, তবে তিনিও ভিলেন। তার পোর্টফোলিওর হিসাব রাখা অ্যাকাউন্ট্যান্ট, নিরীক্ষকও ভিলেন।

রেগুলেটর

নিয়ন্ত্রক সংস্থায় বসে থাকা অ্যাকাউন্ট্যান্টরা যদি উল্লিখিত তিন পক্ষের অন্যায় প্রতিহত না করেন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, তিনি তার পেশাগত নৈতিকতার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তিনিও ভিলেন। এছাড়া যথেষ্ট প্রমাণ পেয়েও যে বিচারক ভিলেনদের যথোপযুক্ত সাজা নিশ্চিত না করেন, তিনিও ভিলেন।

সাং হিরো

আর্থিক বাজারের আনসাং হিরোরা যদি আপাত আরামদায়ক চেয়ারটির মায়া ত্যাগ করে সত্য প্রতিষ্ঠায় দৃঢ় হন, তিনিই সাং হিরো। ম্যানেজমেন্টকে ঠকানো, কর ফাঁকি, বিনিয়োগকারীর সঙ্গে প্রতারণা ইত্যাদি যত কেলেঙ্কারির কথা সমাজে প্রকাশিত হয়েছে, তার নেপথ্যে ছিলেন এই সাং হিরোরাই, তাদের একটি বড় অংশই অ্যাকাউন্ট্যান্ট।

ফিন্যান্সিয়াল ফ্রড ইনভেস্টিগেশন স্টাডিজের পর্যবেক্ষকদের ধারণা, করপোরেট বিশ্বে ১০ শতাংশ মানুষ কখনই তার পেশাগত নৈতিকতা থেকে বিচ্যুত হন না। ১০ শতাংশ মানুষ যেকোনো উপায়ে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হবেনই। আর মধ্যবর্তী ৮০ শতাংশ নৈতিকতার গুরুত্বও বোঝেন, অনৈতিক উপার্জনের আপাত প্রাপ্তিগুলো সম্পর্কেও ধারণা রাখেন। তারা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে নিজের কাজ করে যেতেই ইচ্ছুক। তবে তাদের বিচ্যুতি অসম্ভব নয়। মধ্যবর্তী ৮০ শতাংশকে হিরোদের দলে টেনে আনার মতো আইনি পরিবেশ ও শক্তিশালী সংস্কৃতিই হবে আগামীর আর্থিক বাজারের মূল রক্ষাকবচ; ঢাকা-চট্টগ্রামের বাজারেও, ওয়াল স্ট্রিটেও।


source:http://bonikbarta.net